ওয়াহিদ মুরাদ, বিশেষ প্রতিনিধি।।পহেলা নভেম্বর থেকেই বাঙালীর ঐতিহ্য নবান্ন উৎসবকে ঘিরে কৃষকের ঘরে ঘরে বইছে আনন্দের জোয়ার। আমন ধানের এ মৌসুমে নতুন ধান ঘরে তোলার উৎসবে মাতোয়ারা গ্রাম বাংলার কৃষক-কৃষানিরা।খুলনার দিঘলিয়ায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। ফসলী মাঠে বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে বইছে তৃপ্তির হাসি। প্রতি বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ১৮ মন ধান পাচ্ছেন কৃষক। বাজার দরও চড়া থাকায় প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ থেকে ১৪শ’ টাকায়।সরেজমিনে ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমন মৌসুমে এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে এবারে ২ হাজার ৯৭৭ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে।এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী জাতের)১হাজার ২৭৭ হেক্টর জমিতে, হাই ব্রীড জাতের ৫০০ হেক্টর জমিতে,স্থানীয় জাতের ১ হাজার হেক্টরে আমন ফসল উৎপাদন করেছেন কৃষকরা। মাঠ জুড়ে সোনালী ফসলের সমারোহে কৃষকের মুখে বইছে তৃপ্তির হাসি। বাম্পার ফলনে কৃষকের ঘরে ঘরে বইছে উৎসবের আমেজ। সপ্তাহ জুড়ে মাঠে মাঠে কর্তন শুরু হয়েছে উচ্চ ফলনশীল জাতের একাধিক প্রজাতির আমন কর্তন।সোমবার উপজেলার ব্রহ্মগাতী গ্রামের কৃষক আবুল কালাম, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, রায়হান মুসল্লী, বিপ্লব, বিপুলসহ একাধিক কৃষককে মাঠে ধান কাটা ও ধান মাড়াই করে ধান ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।ফলন ভালো হওয়ায় বেজায় খুঁশী তারা। তৃপ্তির হাসি দিয়ে ধান কাটা এ কৃষকরা বলেন, গতবারের চেয়ে এবারে প্রতি বিঘায় ৩/৪মন ধান বেশী পাবো। বাজারে দামও রয়েছে ভালো।উৎপাদিত ফসলে বিঘা প্রতি সার, ঔষধ, শ্রমিকসহ খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা। সেই খানে বিঘা প্রতি ধান বিক্রি করতে পারছে ১৪ হাজার টাকায়। ফসলী মাঠে পোকা মাকড়ের আক্রমনও এবারে কম হয়েছে বলে কৃষকেরা জানান।এ বিষয়ে ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মনির হোসেন, কামাল হোসেন, কামরুল ইসলাম ও আনোয়ারুজ্জামান বলেন, অন্যসব বছরের চেয়ে এবারে আমনের ফসল খুবই ভালো হয়েছে। বড় ধরনের কোন রোগবালাই ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসায় কৃষক তাদের কাংঙ্খিত ফসল ঘরে তুলতে পারছে। কৃষি অফিস থেকে ইতিমধ্যে এসব চাষিদের বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ ও নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক পরামর্শের কারণেই ভালো ফসল ফলাতে সক্ষম হয়েছে কৃষকরা।এ সম্পর্কে দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ কিশোর আহমেদ বলেন, “এবারে এ উপজেলায় কৃষকরা ২ হাজার ৯শত ৭৭ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করেছেন।দিঘলিয়া এলাকা আমন চাষের জন্য খুবই উপযোগী।এবার আমিসহ আমার উপ-সহকারী কৃষি অফিসারগণ আগেভাগে মাঠে মাঠে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কৃষকদের কারেন্ট পোকা ও মাজড়া পোকা দমনের ব্যাপারে সচেতন করেছি। উঠোন বৈঠক করেছি। এবার বালাই দমনে কৃষকরা সফল হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে।তিনি আরো বলেন, ‘এ অঞ্চলে কৃষকেরা ব্রি-৮৭ ও ব্রি-১০৩ ধান চাষ করে সবচেয়ে ভালো উৎপাদন পেয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৫.৮ মে. টন ও ৫.৯ মে. টন উৎপাদন হয়েছে। আগামীতে এই ধান দুটি লাগানোর জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে।দিঘলিয়া উপজেলার পশ্চিম পার্শ্বে এ বছরের অতি বৃষ্টির কারণে প্রায় ২০/২৫ হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার কারণে আমন চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। ফলে ১০০ মে. টন থেকে ১৫০ মে. টন ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা।এ ব্যাপারে আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও বিএডিসি’ কে জানিয়েও সফলতা পাইনি। পানি নিষ্কাশনে যে অর্থ প্রয়োজন সে অর্থের যোগান দিতে তারা অপারগতার কথা জানিয়েছিল। বর্তমানে জমিগুলো জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে। বিএডিসি ও স্থানীয় প্রশাসনের এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।