ওয়াহিদ মুরাদ,বিশেষ প্রতিবেদক।।খুলনার দিঘলিয়ায় প্রতিকূলতা সহনশীল আমন ধানের চাষাবাদ পদ্ধতি, বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ শীর্ষক কৃষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।মঙ্গলবার ১৬জুলাই দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের অডিটোরিয়ামে বিনা উপকেন্দ্র, সাতক্ষীরার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে উক্ত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বিনা’র মহাপরিচালক ডঃ মোঃ আবুল কালাম আজাদ উক্ত প্রশিক্ষণের শুভ উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিনা’র গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালী করন প্রকল্প এর সিএসও ও প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ শহীদুল ইসলাম এবং দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো: কিশোর আহমেদ।বিনা’র গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালী করণ প্রকল্প এর অর্থায়নে ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরার বাস্তবায়নে এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিঘলিয়ার সহযোগিতায় এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।সকাল ১০টায় শুরু হয়ে দিনব্যাপী চলে এই প্রশিক্ষণ। অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে উপ- প্রকল্প পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান প্রশিক্ষণার্থী কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। দিনব্যাপী এই কৃষক প্রশিক্ষণে ৫০ জন কৃষক-কৃষানী অংশ গ্রহণ করেন।প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে কর্মকর্তারা বিনা ১৭ ও বিনা ২৩ ধান চাষের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন–আমন জাতের উচ্চফলনশীল একটি ধান হল বিনা ধান ১৭ । এ ধানটি খরাসহিষ্ণু।এটি চাষ করতে সময় কম লাগে এবং সারও কম লাগে।গাছ খাটো ও শক্ত বলে হেলে পড়ে না। আগাম পাঁকে বিধায় কাটার পর সহজেই আলু, গম বা রবিশস্য চাষ করা যায়।জাতটি প্রায় সব ধরনের পোকার আক্রমণ ও বিভিন্ন রোগ যথা- পাতাপোড়া, খোল পঁচা ও কান্ড পঁচা ইত্যাদি রোগ তুলনামূলকভাবে বেশি প্রতিরোধ করতে পারে। ধান ও চাল লম্বা এবং চিকন এবং খেতেও সুস্বাদু। ফলে বাজার মূল্য বেশি ও রপ্তানির উপযোগী। চাউলে এ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৪.৬ শতাংশ। রান্নার পর ভাত ঝরঝরে হয় এবং দীর্ঘক্ষণ রাখলে নষ্ট হয় না। বিনা ধান ১৭ আমন মৌসুমের জন্য অনুমোদিত হলেও জাতটি প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায় অর্থাৎ আউশ ও বোরো উভয় মৌসুমে চাষ করা যায়।প্রশিক্ষকরা এই ধান চাষ আবাদের সময়, বীজতলা তৈরি ও বীজের হার, চারা রোপন, সার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়েও কৃষকদের অবহিত করেন।এরপর প্রশিক্ষকরা বিনাধান ২৩ নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় তারা জানান, ধানটি অধিক ফলনশীল। এই জাতের বৈশিষ্ট্য হলো- এই ধান ১১৫ থেকে ১২৫ দিনের ভিতরে ঘরে তোলা যায়। এই ধান দেশের জোয়ার ভাটা, লবণাক্ততা ও বন্যা কবলিত এলাকার জন্য উপযোগী যা আমন মৌসুমে চাষ করা যায়। ধানটি ৮ডিএস/ মি মাত্রার লবণাক্ততা ও ১৫ দিন পর্যন্ত জলমগ্নতা সহ্য করতে পারে। জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য উফশী রোপা আমন জাতের মতই। মাঝারি উঁচু থেকে নিচু জমিতে এ ধানের চাষ করা যায়। জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে বীজ তলায় বীজ বপণের উপযুক্ত সময়। প্রতি হেক্টর জমি চাষের জন্য ২৫ থেকে ৩০ কেজি বা এক একর জমির জন্য ১০ থেকে ১২ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।উপযুক্ত ফলন নিশ্চিত করতে হলে পুষ্ট ও রোগ বালাই মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। প্রতি ১০ কেজি বীজ শোধনের জন্য ২৫ গ্রাম ভিটাভ্যাক্স-২০০ ব্যবহার করলে ভালো হয়। উর্বর জমিতে বীজতলা তৈরি করলে কোনরূপ সার প্রয়োজন হয় না। অনুর্বর ও স্বল্প উর্বর জমিতে প্রতি বর্গমিটারে ১.৫ থেকে ২. ০ কেজি গোবর বা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে হয়। চারা গজানোর পর গাছ হলুদ হয়ে গেলে দু সপ্তাহ পর প্রতি বর্গমিটারে ১৪ থেকে ২৫ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের পর জমি থেকে পানি নিষ্কাশন করা যাবে না। সেচের খুব একটা প্রয়োজন হয় না, তবে প্রয়োজন হলে সেচ দিতে হবে। ধান পাকার ১০ থেকে ১২ দিন আগে জমির পানি শুকিয়ে ফেলা ভালো।এই ধানের গড় ফলন ৫.৩ টন/ হেক্টর এবং সর্বোচ্চ ফলন ৫.৮ টন/ হেক্টর।