কাগজ প্রতিবেদক।।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেযারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমরা দুই বছর আগে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ২৭ দফা দিয়েছিলাম। আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার বিদায় নিচ্ছে। তবে আমাদের জানা ছিল না কবে স্বৈরাচারের বিদায় হবে। বর্তমানে ৩১ দফা অর্জন কমবেশি তখনই করতে পারব, যখন জনগণের সমর্থন নিয়ে আপনারা সরকার গঠন করতে পারবেন। এজন্য ৩১ দফাকে জনগণের দ্বারে দ্বারে নিয়ে যেতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জনগণের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।
আজ শনিবার বিকেলে বিএনপিঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি বিষয়ক ফরিদপুর বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিকেল ৫টা ৩ মিনিটে তিনি বক্তব্য শুরু করেন এবং শেষ করেন ৫টা ২৩ মিনিটে। ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, ৩১ দফায় জনগণের সমর্থন নেওয়া, আস্থা অর্জন ও ধরে রাখার দায়িত্ব আমার আপনার আপনাদের সকলের। জনগণকে আস্থায় রাখতে হলে সকলকে নিয়ে কাজ করতে হবে। আপনারা সকলে যে যার অবস্থান থেকে কাজ করবেন। আপনারা প্রত্যেকে বিএনপির নেতা, অ্যাম্বাসেডর, বিএনপির প্রতিনিধি।
বিএনপির একার আন্দোলনে স্বৈরাচার পালিয়ে যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকল দল কাজ করেছে, সকল মানুষ একত্রিত হয়েছিল বলেই স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে। তবে আমাদের ওপর জনগণের আস্থা আছে বলে আমাদের ঘরে বসে থাকলে চলবে না। আমরা যাদি চুপচাপ বসে থাকি তাহলে কোনো কাজ হবে না। আমরা এমন কোনো ভুল চিন্তা বা কাজ যেন না করি যাতে আমরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। তাই যারা ভুল করছে তাদের বোঝাতে হবে, সতর্ক করতে হবে। সবাই মিলেই আমাদের কাজ করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, মানুষ যদি না জানতে পারে বিএনপি কি চায়, জনগণের জন্য কি ভাবে, ছাত্রের জন্য কি ভাবে, নারীদের জন্য কি ভাবে, কৃষকের জন্য কি ভাবে, শ্রমিকের জন্য কি ভাবে তাহলে জনগণের সমর্থন আমাদের ওপর থাকবে না।
তিনি বলেন, হয়তো একবারে আমরা পারব না। তবে আমরা সূচনা করে যেতে চাই। পরে ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলতে থাকলে পর্যায়ক্রমে আমরা একটা জায়গায় যাব। এই প্রক্রিয়ার যুক্ত হতে চাইলে জনগণের সমর্থন দরকার। আমরা দেশে একটা জবাবদিহিতার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। শুধু প্রধানমন্ত্রী বা এমপির জবাবদিহিতা নয়, জবাদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে সমাজের সব পর্যায়ে। মেয়র ইউপি চেয়ারম্যান সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল কোনো ব্যক্তি জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। শেখ হাসিনার সময়ে জবাবদিহিতা ছিল না। জবাবদিহিতা থাকলে ফরিদপুর থেকে দুই হাজার কোটি টাকা পাচার হতে পারতো না।
তারেক রহমান বলেন, দেশের এমন এক অবস্থা আমরা গড়ে তুলতে চাই যেখানে চিকিৎসার জন্য দেশের মানুষকে দেশের বাইরে যেতে হবে না, ছাত্ররা শিক্ষাজীবন শেষ করে কাজ পাবে, কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য দাম পাবে। স্বৈরাচারকে যেভাবে আমরা একতাবদ্ধ হয়ে উৎখাত করেছি তেমনি জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জনগণকে আস্থায় রাখতে হবে, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে হবে, জনগণের কথায় উঠতে বসতে ও চলতে হবে। রাজনীতির মূল কথা হচ্ছে জনগণের আস্থা অর্জন। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে যে যে কৌশল আছে তা আমাদের করে যেতে হবে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, হাসিনার অন্যায় অত্যাচার নির্যাতন জুলুমের প্রতিবাদ হচ্ছে বিএনপির এই ৩১ দফা। এটি একটি মানবিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনের বুকলেট।
সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন ৩১ দফা প্রণয়ন কমিটির সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মেহেবী আমিন।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ বিভাগীয় কর্মশালা শুরু হয়। কর্মশালায় ফরিদপুর জেলা ছাড়াও রাজবাড়ী মাদারীপুর শরীয়তপুর গোপালগঞ্জের বিএনপির নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। কর্মশালায় বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ তারেক রহমানকে নানা রকম প্রশ্ন করেন এবং তারেক রহমান সেসব প্রশ্নের জবাব দেন।