কাগজ রিপোর্টার।।ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। আন্দোলনের সময় থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলি পুরোপুরি উদ্ধার হয়নি। সেগুলো দুর্বৃত্তদের হাতে রয়েছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেওয়া অস্ত্রের লাইসেন্সও স্থগিত করে সেগুলো থানায় জমা দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। এসব অস্ত্র জমা ও উদ্ধারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আগামী ৪ বা ৫ সেপ্টেম্বর থেকে যৌথবাহিনী বিশেষ অভিযান চালাবে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব অস্ত্র জমা দিতে হবে। এরপর কারও কাছে কোনো অস্ত্র থাকলে সেটা অবৈধ বলে গণ্য হবে। নির্দিষ্ট সময়ের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা সব ধরনের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরু করব।’অভিযানে সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা যেহেতু বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য মাঠে আছে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিযানে তাদেরও সহযোগিতা নেওয়া হবে। থানা-ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করা হবে। তাছাড়া দাগি অপরাধী ও ছাত্র-জনতার হত্যাকারীদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’আইজিপি বলেন, ‘কতিপয় উচ্চাভিলাষী পুলিশ কর্মকর্তার কারণে বাহিনীতে কিছু সমস্যা হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ১৬ জুলাই থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আন্দোলনের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করে। পুলিশকে সহায়তা করতে বিজিবিকে নামানো হয়। তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। দুর্বৃত্তরা বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সেতু ভবন, বিভিন্ন থানা, পুলিশ ফাঁড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে লুটপাট করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কারফিউ জারি করে নামানো হয় সেনাবাহিনী। কিন্তু তারপরও নিয়ন্ত্রণে থাকেনি ছাত্র-আন্দোলন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। দুর্বৃত্তদের হামলায় ৪৪ জন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। তাদের হত্যা ও থানা-ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে বেশিরভাগ আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে।ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আন্দোলনের সময় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের লোকজনও বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করেছেন। তারাও ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে।তিনি বলেন, ‘আমরাও তথ্য পেয়েছি গত ১৫ বছরে এক লাখের বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সব ধরনের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। থানা থেকেও প্রচুর অস্ত্র লুট করা হয়েছে। অর্ধেকেরও কম অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বৈধ, অবৈধ ও পুলিশের লুট করা আগ্নেয়াস্ত্র জমা না দিলে ঢাকাসহ সারা দেশে যৌথবাহিনী বিশেষ অভিযান চালাবে। এজন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।’পুলিশ সূত্র জানায়, বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার ঘোষণায় শিল্পপতি, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে অস্বস্তি। অনেকে নিজেদের নিরাপত্তাহীনতায় শঙ্কা দেখছেন। কারণ ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে সরকার পতনের দিন অনেক থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি আক্রান্ত হয়েছে। ভস্মীভূত ও ধ্বংস হয়েছে পুলিশের অনেক স্থাপনা। পুরো সক্ষমতায় ফেরেনি পুলিশ। গত রবিবার আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে অঙ্গীভূত অনেক আনসার সদস্য কাজে যোগ দেননি। মামলার আসামি হওয়ায় অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পুরোদমে চালু করা যায়নি পুলিশের টহল ও তল্লাশি কার্যক্রম। নেই সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ ও দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের সাঁড়াশি অভিযান।তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, শঙ্কার কোনো কারণ নেই। পুলিশের সক্ষমতা ফিরে এসেছে। বৈধ-অবৈধ ও থানা-ফাঁড়ি থেকে লুণ্ঠিত সব ধরনের অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান বা সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় যৌথ অভিযান শুরু হবে।