বিশেষ প্রতিবেদক : খুলনাস্থ মোংলা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (সিঅ্যান্ডএফ) দখল-পাল্টা দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। দখলদাররা নিজেদের জাতীয়তাবাদী আদর্শের ধারক-বাহক প্রমাণ করতে অসম এ জবর-দখলে নেমেছে। গত ১৮ দিনের ব্যবধানে দু’ দফায় তালা ভাঙ্গা হয়েছে সিঅ্যান্ডএফ ভবনের। গঠন করা হয়েছে আলাদা দু’টি আহবায়ক কমিটিও। এর নেপথ্যে সংগঠণের প্রায় ১০ কোটি টাকার ভবন এবং বিপুল অংকের তহবিল তছরূপের নীল নকশার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, দখল-পাল্টা দখলযজ্ঞের কারণে একদিকে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায় যেমন মন্দাভাব বিরাজ করছে। অন্যদিকে, ফ্যাসিবাদের কবল থেকে রক্ষার নামে নতুন করে রাজনৈতিক আবরণে অপেশাদারিত্বদের নেতৃত্বে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোংলা কাস্টমস এজেন্ট (সিঅ্যান্ডএফ) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুলতান হোসেন খান এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শেখ পরিবারের আস্থাভাজন বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ লিয়াকত হোসেন। তাদের কাছে নির্বাহী কমিটির অন্যরা এবং সাধারণ সদস্যরা ছিলেন জিম্মি। গণঅভুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তারা আত্মগোপনে চলে যান। খুলনা ও বাগেরহাটে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, সিঅ্যান্ডএফ ভবনে লাগানো গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের ব্যানার ছিড়ে ফেলা এবং মোংলা বন্দরের সকল অপকর্মের হোতা সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেনসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাদ দেওয়ার দাবিতে গত ৪ নভেম্বর সিঅ্যান্ডএফ ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা। তারা লিয়াকত হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দেয়। গত ৬ নভেম্বর থানায় ছাত্রদের সঙ্গে সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বৈঠক করলে ছাত্ররা লিয়াকতসহ বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদের বাদ দেওয়ার দাবি জানান। কমিটি গঠন নিয়ে ব্যবসায়ীরা কয়েক দফা বৈঠকের পর অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেন। কিন্তু এতে ক্ষুব্ধ হয় প্রতিপক্ষ। সূত্র জানায়, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতাদের পরামর্শে ১৯ নভেম্বর বিএনপি সমর্থিত অন্য ব্যবসায়ীরা বৈঠক করেন এবং ২০ নভেম্বর তালা ভেঙে সিঅ্যান্ডএফ ভবনে প্রবেশ করে ১৩ সদস্যের পাল্টা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে সাবেক যুবদল নেতা মোশাররফ হোসেনকে আহ্বায়ক এবং খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইশতির ভাই মাহামুদুন চৌধুরী জনিকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। ভবনের তালা ভাঙার সময় তাদের পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বাপ্পীসহ ছাত্রদল ও যুবদল নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে বিএনপি নেতারা জোর করে অব্যবসায়ীদের দিয়ে অ্যাসোসিয়েশন দখল করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন অন্য অংশের নেতারা। তাদের অভিযোগ, অ্যাসোসিয়েশনের ৮ কোটি টাকার ভবন এবং বিপুল অংকের তহবিল আত্মসাত করতেই ভবন দখল করা হয়েছে। সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খন্দকার সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি পাওয়া যাচ্ছিলো না। ছাত্রদের পরামর্শে আমরা দফায় দফায় বৈঠক করে আমাদের উপদেষ্টা মনিরুজ্জামান মনিকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করি। বিষয়টি ছাত্রদের জানালে তারা তালা খুলে দিতে সম্মত হয়। বুধবার জানতে পারি তালা ভেঙে ভবনে প্রবেশ করে কারা যেন পাল্টা কমিটি করেছে। তিনি বলেন, মোংলা বন্দর কাস্টমসের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং অধিকাংশ ব্যবসায়ী সবাই আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। যারা দখল নিয়েছেন তাদের অধিকাংশই সিঅ্যান্ডএফের সদস্য না। যে প্রক্রিয়ায় ভবন দখল হলো তা সবার জন্যই অশনি সংকেত। সদস্যদের টাকায় তৈরি কোটি টাকার ভবন এবং তহবিল নিয়ে আমরা শংকায় ভুগছি। তবে আরেক কমিটির সদস্য সচিব মাহামুদুন চৌধুরী জনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ভবন দখল নেইনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররাই আমাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে। আমাদের কমিটির সবাই প্রকৃত ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, মনিরুজ্জামান মনির নেতৃত্বাধীন কমিটিতে বিগত সরকারের দোসরদের স্থান দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের দিয়ে আমরা কমিটি গঠন করেছি।