কাগজ রিপোর্ট।।খুলনা সিটি করপোরেশেনের (কেসিসি) ট্রেড লাইসেন্স শাখায় দুর্নীতির বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’। বই গায়েব করে কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাৎ, রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড, দুদকের অভিযানসহ নানা কারণে পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে কেসিসির লাইসেন্স শাখাটি। গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়মে জড়িত শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে আলোচিত এবং দুর্নীতিগ্রস্ত এই শাখায় দীর্ঘদিন পর চালু হয়েছে অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন প্রক্রিয়া। গত ২৭ জুন নগর ভবনে অনলাইন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে ঘরে বসেই কেসিসির ওয়েবসাইটে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করার কথা বলা হলেও নানা বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। জানা যায়, বর্তমানে কেসিসির আওতায় প্রায় ২২ হাজার ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। যা থেকে বছরে কেসিসির বড় অঙ্কের রাজস্ব আয় হয়। দীর্ঘদিন চেষ্টার পর অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।দুই ধাপে অনলাইনে ব্যবসায়ীদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। প্রায় ১২’শ ধরনের ব্যবসায়ের জন্য লাইসেন্স করা যাবে। নতুন আবেদনকারীরা ব্যবসায়ের ধরন অনুযায়ী ফি এবং ভ্যাট দেবেন। আর নবায়নের জন্য ফি ও ভ্যাটের সঙ্গে উৎসে কর যোগ হবে। বর্তমানে যেসব ব্যবসায়ী লাইসেন্স ইস্যু এবং নবায়নের জন্য আসছেন তাদের সবাইকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে আইডি এবং পাসওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছর থেকে তারা সম্পূর্ণভাবে নিজেরাই বিকাশ, নগদ এবং ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে বাড়িতে বসেই নবায়ন করতে পারবেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেসিসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এই শাখার দুর্নীতির বিষয়ে সবাই জানে। এটা অনলাইন হওয়ায় সাধারণ ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন।তাছাড়া সময়,টাকা দুটোই বাঁচবে। তবে যেহেতু প্রথমবার অনলাইন চালু হয়েছে তাই কিছু সমস্যা রয়েছে।দ্রুতই এগুলোর সমাধান হয়ে যাবে।ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বলেন, অনলাইনে বাসায় বসে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে পারিনি।যার কারণে অফিসে এসেছি।এখানে আসার পর বেশ সময় লেগেছে। দৌলতপুর এলাকার ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জানান, ইস্যু করার জন্য নতুন করে ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিচ্ছে।অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা লাগছে। আগামীবার থেকে আর কেসিসিতে আসা লাগবে না বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।ব্যবসায়ী হেলাল জানান, অনলাইনে কাজ হবে খুব সহজে।কিন্তু প্রথমবার চালু হওয়ায় নানান। সমস্যা হচ্ছে। এবার ইস্যু করার পর আগের মতোই লাইসেন্স বই দিচ্ছে। তবে আগামীতে আর লাগবে না বলে জানিয়েছেন।কেসিসি’র রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান খান যুগান্তরকে বলেন, গত ২৭ জুন মেয়র অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু এবং নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। গ্রাহকরা ঘরে বসেই ট্রেড লাইসেন্সসংক্রান্ত সব কাজ করতে পারবেন।কোনো প্রকার হয়রানি বা সময় অপচয় হবে না। বছরে প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে মাত্র ৩০ টাকা মেইনট্যানেন্স ফি নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি ট্রেড লাইসেন্স শাখার ১১টি বইয়ের আত্মসাৎ করা ৫৩ লাখ ৬২ হাজার ৯৪০ টাকা চার কর্মচারীকে সরকারি অর্থ হিসাব শাখায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন কেসিসির সচিব। কর্মচারীরা হলেন লাইসেন্স পরিদর্শক (বাণিজ্য) মনিরুল ইসলাম, কাজী মনজুর উল আলম, শেখ শাহেদ হাসান এবং মো. হাবিবুর রহমান। এর আগে ২০১৬ সালে লাইসেন্স শাখায় রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে কেসিসির লাইসেন্স শাখায় অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন।