ওয়াহিদ মুরাদ, বিশেষ প্রতিবেদক।।খুলনার দিঘলিয়ায় ভৈরব নদীর ওপর নির্মাণাধীন ভৈরব সেতু নির্মাণে কচ্ছপ গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু থেকে ধীর গতিতে চলমান রয়েছে। খুলনা শহর এবং দিঘলিয়া উপজেলার মাঝে বয়ে চলা ভৈরব নদীর উপর নির্মিত ভৈরব সেতু তাইতো খুলনা তথা দিঘলিয়াবাসীর কাছে প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে “এই সেতু কি এতদ অঞ্চলের মানুষের কাছে শুধু স্বপ্নই হয়ে রয়ে যাবে নাকি এই সেতু নির্মিত হবে?”ভৈরব সেতু নির্মাণের শুরুতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ত্রিমুখি সমস্যা। প্রথম সমস্যা ভূমি অধিগ্রহণ। দ্বিতীয় সমস্যা সেতুর নির্মাণ স্থলে খুলনা শহরাংশে রেলওয়ের জায়গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুকূলে হস্তান্তর এবং তৃতীয় সমস্যা হলো সেতুর নির্মাণ স্থলের বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ।সেতুর দিঘলিয়া অংশের জমি অধিগ্রহণ ও স্থাপনা নিলাম ও অপসারণ কাজ শেষ হলেও গাছপালা ও মসজিদ অপসারণ করা হয়নি। এদিকে সেতুর দিঘলিয়া অংশের ১৪ টা পিলারের মধ্যে মাত্র ৬টি পিলারের কাজ শেষ হলেও ৬টি পিলারের কাজ আংশিকভাবে করা হয়েছে। ২টি পিলারের কাজ মাটির নিচেই রয়ে গেছে। এদিকে নদীর মাঝের দুটি পিলার এখনও বসানো হয়নি। অপরদিকে খুলনা শহরাংশের নদীর কাছাকাছি ১টা পিলার সম্পূর্ণ ও অপর পিলার আংশিকভাবে করা হয়েছে। সম্প্রতি সময়ে সেতুটির শহরাংশের জায়গার স্থাপনা অপসারণ ও পিলার স্থাপনের কাজ শুরু হলেও ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে অজ্ঞাত কারণে দিঘলিয়া তথা খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত ভৈরব সেতুর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। যা আজও অবধি বন্ধ রয়েছে। শুধু তাই নয় ভৈরব সেতু বাস্তবায়নে খালি করা জায়গায় আবার অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে।উল্লেখ থাকে যে, খুলনা শহর ও পূর্বদিকের জেলা গুলোর সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও এ জনপদের মানুষের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নে মহানগরী ও দিঘলিয়ার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদের উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প ২০১৯ সালে ১৭ ডিসেম্বর একনেকে পাস হয়।তারই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ২৭ জুলাই সড়ক ও জনপথের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করেন এবং ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে সেতুর নির্মাণ কাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। কার্যাদেশের পর শুরু হয় এ সেতুর নির্মাণকাজ। পরবর্তী দুবছরে এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্ধকৃত জমির অধিগ্রহণ ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ করতে কেটে যায় দুই বছর।সেতুর পূর্বাংশ অর্থাৎ দিঘলিয়া অংশের কাজ শুরু হলেও সাড়ে ৩ বছরে নির্মাণ হয়েছে ৭ পিলার।এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে সাড়ে তিন বছর।নতুন করে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত,তাও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।নানা অজুহাতে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয় চার থেকে পাঁচবার। কয়েক মাস ধরে ফের বন্ধ রয়েছে সেতুর নির্মাণ কাজ।ভৈরব সেতুর কাজে ধীর গতির কারণে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এ সেতু নির্মাণ হলে স্থানীয় জনপদের মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনে নতুন ধারা যোগ হবে। কিন্তু মানুষের সে আশার ক্ষেত্রে বেরশিক প্রতিবন্ধকতার যেন শেষ হচ্ছে না।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,এ পর্যন্ত সেতু নির্মাণের অগ্রগতি মাত্র ১৫%। এ অবস্থায় নতুন করে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ সময় বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ৩০ জুন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।প্রকল্প এলাকা ঘুরে ও সড়ক বিভাগ থেকে জানা গেছে, গত সাড়ে তিন বছরে প্রকল্পের দৃশ্যমান অগ্রগতি হতাশাব্যঞ্জক এবং খুবই কম।এদিকে প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ভৈরব সেতুর নকশায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে।ভৈরব সেতু বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠান মেসার্স ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) এর কর্মকর্তা প্রকৌশলী এস এম নাজমুল হাসান এ প্রতিবেদককে জানান, আগামী সপ্তাহ থেকে সেতুর কাজ শুরু করা হবে।তবে এ সেতুটির নির্মাণ কাজে ধীর গতি কেন এ বিষয় নিয়ে খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, এ সেতুটি বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করছে দিঘলিয়া তথা খুলনাবাসীর জীবনমান উন্নয়ন ও পরিবর্তনের এক অভাবনীয় মাইলফলক।পাশাপাশি এ সেতু যোগাযোগের ক্ষেত্রে খুলনার সাথে উত্তর-পূর্বাংশের কয়েকটি জেলার সাথে রচিত হবে এক মহাসেতু বন্ধন।